কুমিল্লায় হাড় কাঁপানো শীতে জুবুথুবু জনজীবন

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লায় হঠাৎ রেকর্ডপরিমাণ তাপমাত্রা হ্রাসে জুবুথুবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। টানা ৪৮ ঘন্টায় এ জেলায় সূর্য্যরে দেখা মেলেনি। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়ে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়েছে শ্রমজীবি মানুষ। প্রয়োজনের বাহিরে কেউ ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছে সহায়-সম্বলহীন মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
শীতের তীব্রতায় প্রতিদিনই তাপমাত্রা হ্রাসের রেকর্ড নির্ণয় করছে কুমিল্লা জেলা আবহাওয়া অফিস। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারী) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ করা হয়েছে। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।
গতসপ্তাহের শুরুতে জেলা জুড়ে রাতের বেলায় প্রচুর ঘন কুয়াশা শুরু হয়ে সকাল ১১টা পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। কয়েক দিনের কুয়াশার পর হঠাৎ বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। দিনের বেলায় সূর্য্যরে আলো ভূ-পৃষ্ঠে না পৌঁছায় এবং দিন ও রাতে সমান তালে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম কোণের হিমেল হাওয়ায় প্রাণীকূলে শৈত্যপ্রবাহের ন্যয় ঠেঁকছে।
এদিকে, শীতের তীব্রতায় অসহায় হয়ে পড়েছে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষ। কর্মের তাগিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে বেশ বেকায়দায় পড়ছে তারা। যারাই ঘর থেকে বের হচ্ছেন তাদের সকলেরই গায়েই ছিল ভারী গরম কাপড়। শীতের তীব্রতায় এবং হিমেল হাওয়ায় তাতেও যেন শীত নিবারণ হচ্ছে না। অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ দিনের বেলায়ও খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
কুমিল্লা আহবাওয়া অফিসের অফিসার ইন-চার্জ ইসমাইল হোসেন জানান, আজ দুইদিন যাবৎ ক্রমশই তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। এ সময়ে কুমিল্লাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। সেখানে ৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে। বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ করলেও বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এছাড়া সকাল ৬-৯টা পর্যন্ত সর্বনিম্ন ১৪.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ করি। দিন ও রাতে সমান তালে ঘন্টায় ৮-১০ কিলোমিটার বেগে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম কোনে বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় ক্রমশই তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন ওই আবহাওয়াবিদ।
এদিকে, পৌষের ওই হাড়কাঁপানো শীতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। শীতের এমন তীব্রতা থাকলে জেলা জুড়ে হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডা জণিত সমস্যায় শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আজিজুল হোসেন জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৮টি বেডসহ সর্বোচ্চ ৪০ রোগীর ধারণ ক্ষমতা। কখনও কখনও সেগুলো বেড়ে ৭০-৮০জনে পৌঁছে। কিন্তু বর্তমানে ২৮টি বেডও পূরণ হয়নি। আজ কয়েকদিন যাবৎ যে পরিমাণ শীতের তীব্রতা বেড়েছে তার প্রভাব পড়বে আগামী ২/১ দিন পর। সেগুলো মাথায় রেখে আমার যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
তিনি মায়েদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, প্রতিটি মা যেন তাদের শিশু সন্তানদের প্রতি অধিক যত্ন নেন। কোন শিশু যাতে খালে পায়ে না থাকে, ঘরের বাহিরে না যায়, রাতে ঘুমানোর সময় লেপ বা কম্বলের নিচ থেকে বাহির না হয়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন জানান, এই শীতে অধিক ঝুঁকিতে শিশু ও বৃদ্ধরা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখতে সকলেই গরম কাপড়-চোপড় পরিধান করতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বাঁসি ও বাহিরের খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। শ্রমজীবী মানুষ ব্যতিত শিশু ও বয়স্করা যেন ঘর থেকে বের না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

  • কুমিল্লা