কিছু রাজনীতিবিদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে- বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফরিদ উদ্দিন

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১২ মাস আগে

Spread the love

মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আজ খুবই দুঃখ হচ্ছে। আজও মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে। স্বাধীণতার ৫০ বছর পরও আবার কেন মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে। সম্প্রতি দৈনিক ব্রাহ্মণপাড়া বুড়িচং সংবাদ পত্রিকার আয়োজনে ফেইস টু ফেইস অনুষ্ঠানের সাথে একান্ত আলোচনায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) কুমিল্লা জেলার সহ-সভাপতি এবং বুড়িচং উপজেলার সভাপতি স্বাধীনতার সূর্য সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফরিদ উদ্দিন এ কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, বর্তমানে একটা জিনিসের বড়ই অভাব রয়েছে। আলগা ঘর কিংবা বৈঠক ঘর নেই। এক সময় আমাদের দেশের বিভিন্ন বাড়ীতে কাচারি ঘর কিংবা বৈঠক ঘরের প্রচলন ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের পরিবারের একটি বৈঠক ঘর ছিল। এই বৈঠক ঘরে বসে বসে মানুষ হুক্কা তামুক খেত। তখন সমাজের বিভিন্ন বিষয়াদির সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। ১৯৫৪ সালে আমি তত একটা বুঝি না। কিন্ত তখন থেকেই আমার মনে রাজনীতির ছোঁয়া লেগেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ছাত্র রাজনীতিটা লালন করেছি। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ৬ দফা ঘোষণা করলেন। তখন ৬ দফা নিয়ে দেশের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগল এবং দেশের সর্বত্রই আলোচনা শুরু হলো। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আমার হৃদয়ে লালিত আদর্শের সাথে মিলে যায়। তাই আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিজের মধ্যে পোষতে থাকি। জাসদে যোগদানের পেছনে অনেক রহস্য রয়েছে। ১৯৪৮ সালে ৪ জানুয়ারী ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি প্রকৃত পক্ষে একজন স্বাধীন চেতা মানুষ। আমি মরতে প্রস্তুত আছি। তখন সমাজতন্ত্রের মধ্যে কিছু লোক ছিল নিউক্লিয়াসে বিশ্বাসী। যারা নিউক্লিয়াসে বিশ্বাসী ছিল তারা স্বাধীনতার প্রতি আগ্রহী ছিল বেশি। তাই আমি নিউক্লিয়াসের দিকে চলে গেলাম। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নিকট দাবী করা হলো জাতীয় সরকার, সমবায় সরকার , বিপ্লবী সরকার ও সমাজতন্ত্র সরকার গঠনের। তখন ছাত্রলীগের মধ্যে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। একটি ভাগ পল্টনে সভা আহবান করলো আর একটি ভাগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা আহবান করলো। উভয় সভাতে প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু পল্টনের সভায় যোগদান না করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যোগদান করলেন। পল্টনের সভায় শ্লোগান দেওয়া হল বৈজ্ঞানী সমাজতন্ত্র আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্লোগান ছিল বিশ্বে এলো নতুন বাদ মুজিববাদ মুজিববাদ। দেশ স্বাধীন করেছিলাম মুজিববাদ কায়েমের জন্য না। তাই আমরা মুজিববাদ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করি না এবং তা প্রতিষ্ঠা করতেও চাই নাই। সমাজতন্ত্র ছাড়া আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে শান্তি আসবে না, সুখ আসবে না। তাই আমরা বৈজ্ঞানী সমাজতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হলাম। আমি জাসদ ছাত্রলীগের বুড়িচং উপজেলার প্রথম সভাপতি হই। ন্যায় প্রতিষ্ঠ করতে গিয়ে আমাকে অনেক জায়গায় নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। একটা সময় আমার অবস্থা এমন হলো যে এলাকায় থাকা আর সম্ভব হলো না। আমার একটা আশ্রয়ের প্রয়োজন ছিল। তাই পুলিশের চাকরীতে যোগদান করেছি। একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিপ্লবীরা বিভিন্ন দিকে ধাপিত হয়েছে। আমি কিন্ত রাজনীতিতে ছিলাম। এক সময় অনেক চাপ সৃষ্টির ফলে আমি চাকুরীতে যেতে বাধ্য হয়েছি। অভাবের তাড়নায় আমরা ছেড়া লঙ্গি পড়ি। মানুষে বলে পাগল। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সাথেই রয়েছি। তাই ১৪ দলীয় জোটের সাথে যুক্ত হয়ে আছি। কিন্ত আমরা আছি আর কি! এই থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। তবে স্বাধীনতার পক্ষে বি-পক্ষে বলে কথা। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল ইপিআরের সাথে কয়দিন আমি দৌঁড়াদৌঁড়ি করলাম। এরই মধ্যে যুদ্ধের ঘনঘটা শুরু হয়ে যায়। তাই আমি তাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে ওমপিতে ট্রেনিং করতে চলে যাই। ট্রেনিং শেষে মতিনগর চলে গেলাম। জামবাড়ী আমাদের একটা প্রিয় জায়গা ছিল। সেখান থেকে আমরা পাঞ্জাবিদেরকে দেখি তারাও আমাদেরকে দেখে। তারাও গুলি করে আমরাও করি। ১৫ইং আমাদেরকে ট্রেনিং সেক্টর থেকে আগষ্ট ক্লোজ করা হলো। তারপর ১৫ যোদ্ধাকে নিয়ে বুড়িচংয়ের আবদুর রবের নেতৃত্বে আমাদেরকে পাঠায় বাংলাদেশের ভেতরে। দুইটা এসএমজি,৩টা রাইফেল ও প্রতিজনকে দুই টা করে গ্রেনেড দিল। এই সরঞ্চাম নিয়েই আমরা বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করি । আমরা রাতের অন্ধকারে বুড়িচং থানা, চান্দিনা ও দেবিদ্বার থানায় গিয়ে কয়েকটা গুলি করে দৌঁড়ে চলে আসতাম। তখন তারা গুলি করে ঝাঁঝরা করে ফেলতো। একটা দুইটা গুলি করে দৌড়ে চলে আসতাম। মানুষ আমাদেরকে বলতো, ধোর মিয়া! গুলি করলা দৌঁড় দিলা এটা কি কাজ হলো? আজ বুঝতে পারছি এটা কতু গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। ৯ই অক্টোবর ১৯৭১ সালে সকাল ৭টা কি ৮টা দিকে খবর পেলাম পাঞ্জাবীরা মালাপাড়া এলাকায় বলদিয়া একটা খেয়াঘাট দিয়ে গোমতী নদী অতিক্রম করে এপারে আসতেছে। তারা দুইটা ভাগ হয়ে একটা ভাগ সাদকপুর দিকে আসতেছে। আরেকটা ভাগ টাকুইর রাস্তায় উঠেছে। আমাদের প্লাটুনটাকে দুই ভাগে ভাগ করেছি। একটা ভাগে ৮জন নিয়ে রব ভাই গেলে গোমতীর আইলে। আমি বাকি ৭জন নিয়ে সাদকপুরে অবস্থান করি। মানুষের মধ্যে একটা দৌঁড়া দৌঁড়ি লেগে গেছে। সবাই বলতেছে আইয়েরে আইয়েরে। পাঞ্জাবিরা ক্যান্টনম্যান্ট থেকে বের হয়েছে। আর খবর ছড়িয়ে গেছে বুড়িচং, সাহেবাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায়। এতে আমাদের জন্য একটা সুবিধা হলো আমরা যেকোন জায়গায় পজিশন নিতে পারি। সাদকপুর ও শ্যামপুরের মধ্যেখানে একট খালি জায়গা আছে যেখানে কোন বাড়ী নাই। এই খালি জায়গার পূর্ব পাশে আমরা অবস্থান নিলাম। তারা পশ্চিম পাশ থেকে আসতেছে। আমরা যে ট্রেনিং করেছি তাতে পাঞ্জাবীদের সরাসরি মোকাবেলা সম্ভব না। আমরা একটা বাড়িতে অবস্থান নেই । এর মধ্যে একজন নড়াচড়া করেছে। তখন তাদের সাথে থাকা রাজাকার বলল, এরা শত্রু হায়। তারপর তারা রাস্তায় দক্ষিণ দিকে মুখ করে বসছে। আমার হাতে একটা এসএলার ছিল। আমি কয়েকটা গুলি করি। যার উপর গুলি পড়ে সেই তো পড়ে যায়। তখন তারা ইয়া আলী বলে উত্তর দিকে চলে যায়। মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আজ খুবই দুঃখ হচ্ছে। আজও মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে। স্বাধীণতার ৫০ বছর পরও আবার কেন মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে। অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা না হলেও তাদের অনেক গুন রয়েছে। অনেক সুখ্যাতি আছে। কিন্ত তারা কেন যে মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে। ৩ শত টাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা শুরু হয়েছে এখন ২০ হাজার টাকা পাচ্ছি। একজন লোক চাকুরী করের ২০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছে না। যিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতা নির্ধারণ করেছেন তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। মাদকমুক্ত সমাজ করতে হলে প্রশাসনের পাশাপশি রাজনীতিবিদদের সক্রিয় হতে হবে। আমি মনে করি অনেক রাজনীতিবিদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। বুড়িচং ব্রাহ্মপাড়া এলাকার রাস্তা ঘাটের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। আমি মনে করি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা প্রয়োজন।

  • বুড়িচং