‘কান্না থামছে না অবুঝ শিশু জান্নাতের’ যৌতুকের বলি ব্রাহ্মণপাড়ার জেসমিন

লেখক: আতাউর রহমান
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

Spread the love

পাঁচ বছর আগে বধূ বেশে স্বামীর সংসারে গিয়েছিল জেসমিন আক্তার। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই যৌতুক চেয়ে শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। কিন্তু জেসমিনের পরিবারের নেই সেই সামর্থ্য । আর এ কারণে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকদের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করেই চলছিল তার জোড়াতালির সংসার। পরে জেসমিন জানতে পারে তার স্বামী তার অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। অবশেষে এসব অত্যাচার আর দ্বিতীয় বিয়ের খবর সইতে না পেরে গত ১৮ ( অক্টোবর ) রাত আনুমানিক দশটায় গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে জীবনের ইতি টানলেন জেসমিন। এমনটাই অভিযোগ জেসমিনের বড় ভাই মো: আবুল বাশারের। প্রসঙ্গত: এ ব্যপারে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। নিহত জেসমিন আক্তার (২৩) কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা ইউনিয়নের ছোটধুশিয়া গ্রামের মৃত জজু মিয়ার মেয়ে। পাঁচ বছর আগে একই উপজেলার সিদলাই ইউনিয়নের দক্ষিণ সিদলাই (গোলাবাড়িয়া) গ্রামের আবু জাহেরের ছেলে আক্তার হোসেনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় জেসমিনের। জান্নাত আক্তার নামে আড়াই বছর বয়েসী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে ওই দম্পতির। নিহতের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে জেসমিন-আক্তারের দাম্পত্য জীবনে যৌতুক নিয়ে দ্ব›েদ্ব কলহ শুরু হয়। প্রায় সময়ই ঝগড়াঝাটি লেগে থাকত জেসমিনের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে। যৌতুক চেয়ে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচার চলত প্রায়ই। এরইমধ্যে ওই দম্পতির ঘরে আসে এক কন্যা সন্তান। তবুও থামেনি যৌতুকের অত্যাচার। বরং অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে গিয়েছিল। তবু সবকিছু সহ্য করেই জেসমিন করছিল স্বামীর সংসার। ঘটনার দিন ( ১৮ অক্টোবর ) সকালে জেসমিন তার স্বামীর বাড়ি যায়। জেসমিনের শাশুড়ী জেসমিনকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। এ সময় তার শাশুড়ী তাকে বলে, ‘তুই আর এই বাড়ি আসবি না। আমার ছেলে আবার বিয়ে করেছে, তোকে নিয়ে সে সংসার করবে না।’ সেখান থেকে বাবা বাড়ি ফিরে আসে জেসমিন। পরে তার স্বামীর সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা শেষে সকলের অগোচরে আনুমানিক রাত দশটার দিকে সে গালায় ওড়না প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। তার আত্মহত্যার খবর পেয়েও স্বামীসহ ওই পরিবারের কোনো সদস্য তাকে দেখতেও আসেনি। পরে ব্রাহ্মণপাড়া থানাপুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ময়নাতদন্ত শেষে নিহত জেসমিন আক্তারের লাশ (১৯ অক্টোবর) বিকেলে তার বাবার বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। এদিকে মা হারানো আড়াই বছর বয়েসী অবুঝ শিশু জান্নাত আক্তারের কান্না যেন থামতেই চাইছে না। বর্তমানে শিশুটি তার খালার তত্বাবধানে আছে। এ ব্যপারে নিহত জেসমিন আক্তারের বড় ভাই আবুল বাশার বলেন, পাঁচ বছর আগে আমার বোন জেসমিনের বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের দক্ষিণ সিদলাই (গোলাবাড়িয়া ) গ্রামের আবু জাহেরের ছেলে আক্তার হোসেনের সাথে। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই যৌতুক চেয়ে আমার বোনের উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু হয়। আমি আমার এতিম বোনকে বিয়ে দিয়েছি অনেক কষ্ট করে, আমার তো যৌতুক দেওয়ার মতোও তৌফিক নাই। তাই যৌতুক না পেয়ে যৌতুকের জন্য আমার বোনকে প্রায়ই মারত। অনেকবার বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করেছে। বোনকে সান্ত¡না দিয়ে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে স্বামীর বাড়িতে ফেরত পাঠাতাম। ভেবেছিলাম ওদের একটি মেয়ে হয়েছে, এখন হয়তো এই অত্যাচার বন্ধ হবে। পরে দেখি অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। পরে এ নিয়ে আমি নিজে বাদী হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় দুটি লিখিত অভিযোগ করেছি। আদালতেও এ বিষয়ে মামলা করেছিলাম। দিন দিন অত্যাচারের মাত্রা এতো বেড়ে গিয়েছিল যে আমার বোনটি এসব অত্যাচার আর সইতে পারছিল না। পরে যখন আমার বোন জানতে পারলো তার স্বামী তার অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেছে তখন সে এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে নিজের জীবন দিয়ে দিল। আমি ও আমার পরিবারের লোকজন এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এ ব্যপারে নিহত জেসমিনের স্বামী আক্তার হোসেনের মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোন বন্ধ। এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল বলেন, যৌতুকের জন্য তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে অত্যাচার করতো এরকমটা আমরা এখনও পাইনি। তবে, জেসমিন-আক্তার দম্পতির মধ্যে বনিবনা ছিল না। ওই দম্পত্তির আড়াই বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। নিহত জেসমিনের বাবার বাড়ির লোকজন অভিযোগ তোলেন, ঘটনার দিন সকালে জেসমিন তার স্বামীর বাড়ি গিয়েছিল। এ বিষয়ের কোনো প্রমাণ আমরা এখনও পাইনি। তবে, কেউ তো আত্মহত্যা এমনিতেই করে না, এর পেছনে কোনো না কোনো কারণ তো অবশ্যই আছে। আমরা তা খতিয়ে দেখছি ।

  • ব্রাহ্মণপাড়া