“কাগজে কলমে ২০৩ খাল” বুড়িচংয়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ খালের অস্তিস্ত নেই

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

কুমিল্লার উত্তরে সবচেয়ে নিকবর্তী উপজেলাটির নাম বুড়িচং। এ উপজেলার উত্তরে দেবিদ্বার ও ব্রাহ্মণপাড়া, পশ্চিমে চান্দিনা, দক্ষিণে আদর্শ সদর এবং পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। ১৬৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১৭২টি গ্রাম ও ১৫২টি মৌজা রয়েছে। প্রায় দুই লাখ ৯৯ হাজার ৭০৫ জন মানুষের বসতি এ উপজেলায় কাগজে কলমে ২০৩টি খালের তথ্য পাওয়া গেলেও অধিকাংশ খালের চিহ্নই এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে কাগজে কলমে ২০৩টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে গেছে। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঠিক তদারকির অভাব এবং যথানিয়মে পানি নিষ্কাশন না করার কারণে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে খালের চিহ্নটুকুও নেই। ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে খালগুলো দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। উপজেলার ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ৯টি ইউনিয়নে ছোট বড় ২০৩টি খালের মধ্যে রাজাপুর ইউনিয়নে ১১০টি, বাকশীমুল ইউনিয়নে ৩টি, বুড়িচং সদর ইউনিয়নে ২৬টি, পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নে ৩টি, ষোলনল ইউনিয়নে ৫টি, ময়নামতি ইউনিয়নে ৯টি, ভারেল্লা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৬টি ও মোকাম ইউনিয়নে ৩০টি খাল রয়েছে। কিন্তু সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন ইউনিয়নে কাগজে কলমে খালের সংখ্যা নির্ধারণ করা থাকলেও বাস্তবে তাদের দেখা যায় না। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও রাস্তাঘাট নির্মাণে সহজীকরণের কারণে বিভিন্ন গ্রামের খাল ও নালাগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। জানা যায়, এ উপজেলার অধিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ কৃষিকাজের সাথে জড়িত। তাদের প্রধান কৃষিপণ্যই ধান। সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় পয়াতের জলা নামক এলাকায়। কিন্তু এখানে সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ক্ষতি হয় আবাদি ফসল ধানের। দুর্ভোগ পোহাতে হয় কৃষকদের। এই দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য বিএডিসি কয়েকটি খাল পুনঃখনন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। পরবর্তীতে খালগুলোর খনন কাজ শুরু করলেও পরিপূর্ণভাবে শেষ না করায় ওই খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বিশেষ করে বুড়িচং সদর বাজারের পশ্চিম পাশের খালটি কয়েকজন প্রভাবশালীর কারণে সঠিক ভাবে খালের খনন কাজ করাই হয়নি। প্রভাবশালীদের কারো বাড়ি রক্ষা করতে গিয়ে, কারো দোকান রক্ষা করতে হবে- ইত্যাদি নানা অজুহাত রক্ষা করতে গিয়ে খালটির খনন কাজ আর এগোয়নি। ফলে খনন কাজ আধা-আধিভাবে শেষ করার পর কিছু দিনের মধ্যেই বুড়িচং বাজারের ময়লা আর্বজনা ফেলার কারণে ভরে গেছে। বুড়িচং বাজার, সিএনজি ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে কোটি টাকার ইজারা আদায় করা হলেও ইজারাদারদের সঠিক তদারকির অভাবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসীনতায় বাজারের ময়লাগুলো খালের মধ্যেই ফেলা হয়। এতে খাল ও নালাগুলো ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা আরো বাড়িয়ে দেয়। ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ সুজন বলেন, পয়াতের জলা থেকে হরিপুর-জরইন হয়ে যে খালটি গিয়েছে, তা ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এতে কৃষকদের আবাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। হরিপুর জরইনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খালটি যে করেই হোক পুনঃ খনন করা দরকার। পয়াতের জলার পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল পুনঃ খনন আন্দোলনের মুখপাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন বলেন, পয়াতের জলার কৃষকদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে খালটি পুনঃ খনন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে কয়েকবার আবেদন করা হয়েছে। কুমিল্লা-৫ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খানের কাছে ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর পয়াতের জলার পানি নিষ্কাশনের জন্য খালটি পুনঃ খনন করার আবেদন করেছি। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দফতরে গিয়েও আবেদন করা হয়েছে। অচিরেই যদি বুড়িচং বাজারের পশ্চিম অংশের খালের ময়লা পরিষ্কার করা না হয়, তা হলে উপজেলা পরিষদ চত্বরের শহীদ মিনারে গণ অনশন কর্মসূচি পালন করবো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার বলেন, বাজারের ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারের ময়লা ফেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গার সন্ধান করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই বুড়িচং বাজারের পশ্চিম অংশের খাল পরিদর্শনে গিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

  • বুড়িচং
  • ব্রাহ্মণপাড়া