‘কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত বিদেশ গামী যাত্রীরা’বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার ১৬টি এয়ার ট্রাভেলসের মধ্যে লাইসেন্স নেই ১২টির

লেখক: Sohel Islam
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

কর্মক্ষম মানুষের তুলনায় কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে বাংলাদেশের অনেক মানুষ দেশের মায়া ত্যাগ করে কর্মের সন্ধানে প্রবাসে পাড়ি জমায়। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই লেবার ভিসায় প্রবাসে গমন করে। কেউ ইচ্ছে করে প্রবাসে যেতে চায় না। দেশে অভ্যন্তরে যখন তার আর কোন কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে না তখনই প্রবাসে যাওয়ার চিন্তা করে। প্রবাসে যাওয়ার জন্য কেউ তাদের বাপ-দাদার বসত ভিটা বিক্রয় করে আবার কেউ জমি জমা বিক্রয় করে। কেউ আবার চড়া সুদে ঋণ গ্রহন করে আবার কেউ এনজিও থেকে ঋণ গ্রহন করে প্রবাসে গমনের টাকা জোগার করে থাকে। সংসারের অন্যান্য সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বাবা অথবা বড় ভাই প্রবাসে গমন করে থাকে। দেশের মানুষ প্রবাসে যেতে হলে কোন না কোন ট্রাভেলসের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করতে হয় এবং টিকেট কাটতে হয়।ভিসা প্রসেসিং করতে এবং টিকেট কাটতে গিয়ে প্রবাসীরা অনেক ভাবে হয়রানীর শিকার হয়। বিশেষ করে যে সকল এয়ার ট্রাভেলসের লাইসেন্স নেই তাদের কাছে বেশি হয়রানীর শিকার হয়। কারণ লাইসেন্স না থাকায় তাদের জবাবদিহিও থাকে না। তাই তারা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যথা তথায় একটি কিংবা দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ট্রাভেলসের অফিস ও রিকুটিং অফিস খুলে বসে। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ তাদের মিষ্টি কথা শুনে ভবিষ্যৎ উজ্জল করার চিন্তা ভাবনায় ধার দেনা করে ভিসার জন্য টাকা জমা দেয়। পরবর্তীতে মাসের পর মাস এমনকি বছর অতিবাহিত হলেও ভিসার খবর থাকে না। এই ভিসা ব্যবসায়ী ও ট্রাভেলস ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করার কারণে সাধারণ মানুষ তাদের সাথে কোন রকমে বুঝে উঠতে পারে না। তাই অনেক সময় মোটা অংকের টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হলেও মুখ বুঝে চলে যায়। সূত্রে জানা যায়, বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ১৬টি এয়ার ট্রাভেলসের অফিস থাকলেও বৈধতা নেই ১২টির। এই দুই উপজেলায় মাত্র ৪টি এয়ার ট্রাভেলসের মালিক বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।ভরাসার বাজারের নিউ মর্ডাণ এয়ার ট্রাভেলস, নিউ মক্কা এয়ার ট্রাভেলস, বুড়িচং বাজারের সুবাতা এয়ার ট্রাভেলস, লামিয়া এয়ার ট্রাভেলস, শংকুচাইল বাজারের এস কে এয়ার ট্রাভেলস, দেবপুর বাজারের জিম এয়ার ট্রাভেলস, কংশনগর বাজারের নব যাত্রা এয়ার ট্রাভেলস, সোনালী এয়ার ট্রাভেলস, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরের সরকার এয়ার ট্রাভেলস, মর্ডাণ এয়ার ট্রাভেলস, চান্দলা বাজারের দি স্টার এয়ার ট্রাভেলসসহ ১২টি ট্রাভেলসের কোন প্রকার লাইসেন্সসহ বৈধ কোন কাগজপত্র নেই।ভরাসার বাজারের সেবা হজ কাফেলা, বুড়িচং বাজারের গোমতী এয়ার ট্রাভেলস, মক্কা মদিনা এয়ার ট্রাভেলস, বুড়িচং এয়ার ট্রাভেলস লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। সূত্রে আরো জানা যায়, লাইসেন্সবিহীন ট্রাভেলসগুলো ঢাকার বিভিন্ন রিকুটিং এজেন্সী এবং ট্রাভেলসের নাম ভাঙ্গিয়ে দেদারছে আদম ব্যবসা পরিচালনা করছে। এতে প্রবাসগামী সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং প্রতারণার শিকার হচ্ছে। গ্রামের সহজ সরল মানুষদেরকে বিভিন্ন কলা-কৌশলে ভুলিয়ে এবং বড় বড় স্বপ্ন দেখিয়ে প্রবাসে যাওয়ার জন্য আগ্রহী করে তোলে। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সঠিক তদারকি না থাকায় দুই উপজেলার ট্রাভেলসের মালিকগুলো অবৈধ ভাবে দীর্ঘদিন ব্যবসা পরিচালনা করছে। এতে প্রবাসীরা ব্যাপক ভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বুড়িচং এয়ার ট্রাভেলসের স্বত্তাধিকারী মোঃ আবুল কালাম আজাদ সুজন জানান, আমরা অনেক কষ্ট করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটক মন্ত্রণালয় থেকে বিধি মোতাবেক সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ট্রাভেলসের লাইসেন্স গ্রহন করেছি এবং নিয়ম-নীতি মেনে সরকারী সকল প্রকার ট্যাক্স ভ্যাট প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছি। অথচ কিছু অসাধূ চক্র লাইসেন্স না নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নামে বে-নামে এয়ার ট্রাভেলসের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। তাদের অপকর্মের কারণে আমরা ব্যবসায়ীক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া ট্রাভেলস এসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ আবু হানিফ বলেন, ট্রাভেলসগুলোর সরকারী বৈধতা ও লাইসেন্স এর বিষয়ে আমার কোন অভিমত নেই। এটা দেখার জন্য সরকারী লোকজন রয়েছে। তারা সেই বিষয়ে খোঁজ খরব নিয়ে দেখবে। তবে আমি বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ায় অবস্থিত সকল ট্রাভেলসের মালিকদের নিয়ে মিলে মিশে কাজ করে যেতে চাই। যেন প্রত্যেক ট্রাভেলসের মালিকরা নিরাপদে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। যাদের লাইসেন্স নেই তাদেরকে সব সময় বলি লাইসেন্স করে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য। লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়টি একান্ত ভাবে ট্রাভেলস মালিকদের এখতিয়ার। এতে আমাদের এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কারো বিষয়ে কোন প্রকার অভিযোগ নেই। এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, প্রশাসনের সঠিক মনিটরিং থাকলে জনগন কাক্সিক্ষত সেবা থেকে কখনো বঞ্চিত হবেন না।

  • ব্রাহ্মণপাড়া