“এস এম শহিদুল হক ভূঁইয়া”ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামকে উপজেলায় রূপান্তরিত করতে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

Spread the love

দেশের মফস্বলে নিভৃত পল্লীর মানুষ গুলোর রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধাগুলো সহজলভ্য ও জীবনমান উন্নয়নের প্রয়োজনে প্রশাসনিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর বুড়িচং-এর উত্তরাংশের যোগাযোগ বঞ্চিত মানুষের জন্য একটি উপজেলা হবে সেই লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেই সময় বর্তমান ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দেশবরেণ্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় কয়েকজন কৃতি সন্তান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। স্থান নির্ধারণ নিয়ে এক পক্ষ চান্দলাকে উপজেলা করার দাবিতে দেশ বরেণ্য সুসন্তান থেকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এমবিএ করা বাংলাদেশ সরকারের একসময়ের কৃষিমন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা ও কৃষিমন্ত্রী এ.কে.এম আজিজুল হক ও চান্দলা গ্রামেরই আরেকজন কৃতি সন্তান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. মুসলেউদ্দিনসহ তৎকালীন জননেতা ও পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু ও চান্দলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল কাফি এবং উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল আলমসহ অনেক ব্যক্তিবর্গ পক্ষে অবস্থান করেন। বর্তমানে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা যেখানে অবস্থিত ব্রাহ্মণপাড়া ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষাবিদ এস.এম. শহিদুল হক ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে উপজেলা স্থানটি নির্ধারন করার জন্য পক্ষে কঠোর অবস্থানে থাকায় আজিজুল হক সাহেবের সাথে ভীষণ অসম এক লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। জনাব এস এম শহিদুল হক ভূঁইয়া হাল ছাড়বার নয়। তাই তিনি ঢাকায় বিভিন্ন অফিস আদালত সচিবালয়সহ তৎকালীন সময়ের জাতীয় রাজনীতির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে তদবির, প্রাণপণ লড়াই অব্যাহত রাখেন। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা থাকার পরও তিনি দিনরাত্রি এক করে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা করা প্রয়োজন, তার বিভিন্ন সুবিধাসমূহ ও যৌক্তিক দিকগুলো লিপিবদ্ধ করে জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারক মহলে একজন স্বল্প আয়ের শিক্ষক তার উপার্জিত সকল অর্থ ব্যয় করে স্বশরীরে, দরখাস্ত ও তদবির চালিয়ে যেতে থাকেন অবিরাম। ভুলে যান নিজ সংসারের কথা। সেই সময় তার এই লড়াইয়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন দেশবরেণ্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় জিরুইন গ্রামের কৃতি সন্তান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) জনাব আব্দুল খালেক। শহিদুল হক ভূঁইয়ার মানসিক শক্তি আবারো বেড়ে গেল। এইভাবে উনার এই প্রচেষ্টার সাথে হাতে হাত রেখে এই দাবির সাথে একে একে একাত্বতা ঘোষণা করে নিজেদেরকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার পক্ষে সোচ্চার করেন এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান অনেক শ্রদ্ধাভাজন ব্যাক্তি। সেই শ্রদ্ধেয়, স্মরণীয়, বরণীয় মানুষগুলো মধ্যে অন্যতম হল-জনাব রফিকুল হক ভূঁইয়া, সাবেক চেয়ারম্যান দুলালপুর ইউপি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ব্রাহ্মণপাড়া, শ্রদ্ধেয় আব্দুল খালেক, সাবেক চেয়ারম্যান সিদলাই ইউনিয়ন পরিষদ, জনাব ফরিদউদ্দিন মাষ্টার, ধান্যদৌল, শ্রদ্ধাভাজন আলহাজ্ব মোঃ তৈয়ব আলী বিশিষ্ট সমাজসেবী এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, শ্রদ্ধেয় জনাব ফজলুল হক (শিক্ষক)সাবেক সেক্রেটারি প্রাথমিক প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, ব্রাহ্মণপাডা, শ্রদ্ধাভাজন জনাব হাজী নায়েব আলী মাস্টার কল্পবাস। তখন ৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা গঠিত হয়েছিল। ৭ টি ইউনিয়নের ৭ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে চারজন ভোট দিয়েছিলেন ব্রাহ্মণপাড়া পক্ষে এবং তিনজন ভোট দিয়েছিলেন চান্দলার পক্ষে। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য হেলিকপ্টারে উড়ে এসেছিলেন তদানীন্তন সরকারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমসা আমিন। তিনি প্রস্তাবিত উভয় স্থান পরিদর্শন করলেন। বিশ্বাস করাই কঠিন যে, সেদিন ব্রাহ্মণপাড়াবাসি ঝাড়ু হাতে ব্রাহ্মণপাড়ার প্রত্যেকটি রাস্তাঘাট নিজ হাতে পরিষ্কার করেছিলেন। ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তার পাশে অপরিচ্ছন্ন কাগজপত্র ও ময়লা সবকিছু তাদের কচি হাতে পরিষ্কার করেছিল। সে এক আনন্দমুখর দিন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমসা আমিনকে স্কুলের স্কাউটরা সামরিক কায়দায় স্যালুট দিয়েছিল। সেটা তিনি পরিদর্শন করেন এবং যারপরনাই খুশি হয়েছিলেন। অবশেষে এলো দুপুরের খাবারের পালা। জনাব শহিদুল হক ভূঁইয়ার সেদিন কত টাকা খরচ হয়েছিল তার হিসাব রাখেননি। তবে সেই দিন ৩৫ থেকে ৪০ পদ খাবার তৈরি হয়েছিল। যার রাধুনী ছিলেন জনাব শহিদুল হক ভূঁইয়ারই সুযোগ্য সহধর্মিনী। আতিথেয়তায় ও পরিচ্ছন্নতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন এতটাই খুশি হলেন যে, হাসতে হাসতে বলেই ফেললেন যেই এলাকার মানুষ এত অতিথি পরায়ণ পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি উপজেলা পরিষদ সেখানেই হওয়া উচিত। কেননা এখানে চাকরির সুবাদে অবস্থান করবেন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, বিচার বিভাগের প্রতিনিধি, সহকারী কমিশনার ভূমি, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি সহ পুলিশের থানার কর্মকর্তা বৃন্দু ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। সেই থেকে শুরু আজ আমরা শিক্ষা- দীক্ষা যোগাযোগ সহ সর্বক্ষেত্রে অগ্রগামী এক জনপদ। আজও সেই স্মৃতি বুকে নিয়ে ব্রাহ্মণপাড়ারই এক সুসন্তান শিক্ষানুরাগী বিশিষ্ট সমাজসেবক যার রক্ত ঘাম করা উপার্জিত অর্থে প্রতিষ্ঠা করেছেন বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেই সোনালী মানুষ শিক্ষানুরাগী মোশাররফ খান চৌধুরী। তিনি সহ অনেক শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিবর্গরা আজও ভুলেননি জনাব এস এম শহিদুল হক ভূঁইয়া নামের সেই মানুষটির কথা। যার অক্লান্ত পরিশ্রমও একাগ্রতা দ্বারা সংঘটিত করতে পেরেছিলেন অত্র অঞ্চলের বলিষ্ঠ সকল জননেতা, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবীদেরকে। ইনারা সবাই একসাথে মিলে শত বিরূপ পরিস্থিতিতেও উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। জনাব মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী প্রত্যেক মিটিং আলোচনা সভা ও সামাজিক সকল আচার অনুষ্ঠানে সেই স্মৃতির কথা তুলে ধরেন বর্তমান নতুন প্রজন্মের মানুষের মাঝে।উনারা চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন তাঁদের নিজ কর্মমূল্যায়নে এই জনপদের মানুষের মুখে মুখে।

  • ব্রাহ্মণপাড়া