‘উদ্বোধনের এক বছর পার হলেও’ বুড়িচংয়ের রাজাপুর রেলস্টেশনের যাত্রীরা কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

Spread the love

১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ১৫০ কিমি মিটারগেজ লাইন এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৬৯ কিমি রেললাইন জনসাধারণের জন্য খোলা হয়। ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয়। কুমিল্লা-আখাউড়া -শাহবাজপুর লাইনের স্টেশন হিসেবে রাজাপুর রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়। রাজাপুর রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে সূবর্ণ এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী-গোধুলী এক্সপ্রেস, উদয়ন এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, তূর্ণা এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইল, ঢাকা-নোয়াখালী এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, জালালাবাদ এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন চলাচল করে। এক সময় বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ব্যবস্থা ছিল রেলপথ। রেলের মাধ্যমে মানুষ কুমিল্লা শহরে যাতায়াত করতো। এ জন্য রাজাপুর রেলস্টেশনটি তখন খুব জাঁকজমক পূর্ণ ছিল। নৌকা দিয়ে ও হেঁটে মানুষ রাজাপুর রেলস্টেশনে উপস্থিত হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেত। ব্যবসা-বাণিজ্যেসহ যাবতীয় কাজে রেলই ছিল একমাত্র বড়সা। সময়ের পরিবর্তনে সড়ক পথের উন্নয়নের ফলে রাজাপুর রেলস্টেশনটিতে এখন আর আগের মতো যাত্রীরা ভিড় জমায় না। তাদের হাক ডাকের চারদিক মুখরিত হয় না। কুমিল্লা-বাগড়া সড়ক পথ এবং কুমিল্লা মীরপুর সড়ক পথের উন্নয়নের ফলে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া দুই উপজেলার মানুষ সড়ক পথকেই বেছে নিয়েছে। তাই রাজাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায় না। তারপরেও সামান্য যেই যাত্রীরা রেলপথ ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করে তারা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রেলস্টেশনের পরিবর্তন হলেও সেবার মান পরিবর্তন হয় নাই। বর্তমানে স্টেশনটিকে আধূনিকায়ন করে সাজানো হলেও যাত্রীদের সেবায় নেই কোন ধরণের আধুনিকায়ন। ৩০ জানুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকার কোটি টাকা খরচ করে নান্দনিক রেলস্টেশন স্থাপন করেছে বুড়িচং রাজাপুরে। কিন্তু যাত্রীদের বসার রুম এবং টয়লেটের দরজায় ঝুলছে তালা। যাত্রীরা বসে আছে ওয়েইটিং রুমের বাহিরে। স্টেশন মাস্টারের রুম ছাড়া বাকি সব গুলো রুমই বন্ধ। কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায় কাউন্টার বন্ধ। ভিতরে বিছানা বিছানো থাকার জায়গা। দেখলে মনে হবে কারো বাসা বাড়ি। স্টেশনে থাকা অবস্থায় ওয়েইটিং রুমে প্রবেশ করে একজন আনসার সদস্য। স্টেশন মাস্টারকে চাবি বুঝিয়ে না দিলেও একজন আনসার সদস্যকে চাবি বুঝিয়ে দিয়েছে ম্যাক্সের লোকজন এবং লাকসাম রেলওয়ে স্টেশনের এক এস আই। আনসার সদস্যের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাকে এ চাবি লাকসামের এক এস আই এবং ম্যাক্সের লোকজন বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। আমরা এখানে বসে বিশ্রাম নেই। ফাতেমা আক্তার নামের একজন যাত্রী বলেন, আমি কয়েকদিন পর পর ট্রেনে রাজাপুর থেকে কুমিল্লা আসা যাওয়া করি। এ স্টেশনের উন্নয়ন হলেও যাত্রীদের জন্য কোন সুবিধা হয়নি। যাত্রী বসার রুম থাকলেও এ রুমটা কোন দিনও খোলা পাইনি। এটা সব সময় বন্ধ থাকে। যাত্রীরা সবাই বাহিরে বসে থাকে। অন্য একজন যাত্রী বলেন, রুম হচ্ছে ভিআইপিদের জন্য আমাদের জন্য হচ্ছে বাহিরের এ জায়গা। স্টেশন মাস্টারের রুম চালু হইলো কিন্তু আমাদের বসার রুম এবং কাউন্টার নাকি চালু হয় নাই। এত টাকা খরচ করে কি লাভ হলো যদি যাত্রীরা সুযোগ সুবিধা না পায়। আমরা চাই দ্রæত এ রুম এবং টয়লেট গুলো যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, আমি এখানে আসছি দু মাস হবে। আমাকে এখনো ওয়েইটিং রুম এবং দক্ষিণ পাশের টয়লেটের চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। আমি চাবি পেলে রুম খুলে দেবো।

  • বুড়িচং