কুমিল্লার বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়ার- মীরপুর মেজর গনি সড়কটি সংস্কারের অভাবে যান চলাচলের উপযোগিতা হারিয়েছে। সড়কটির অন্তত শতাধিক জায়গায় ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া থেকে জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথ মেজর গনি সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এই সড়কটি যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের বন্যায় এ পথটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে এই পথে যাতায়াতকারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। খানাখন্দ আর গর্তের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ ছাড়া গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরাদ্দ ঘাটতির কারণে আগের অর্থবছরে সড়কটির সংস্কার করা যায়নি। তবে এখন দীর্ঘমেয়াদি কাজ করা হবে। এলাকা ঘুরে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর উপজেলার শাসনগাছা থেকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মীরপুর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ২১ কিলোমিটার। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের অন্তত শতাধিক স্থানে পিচ উঠে ইট-সুরকি বেরিয়ে ছোট- বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। অনেক স্থানে পানি জমে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ বন্যায় সড়কটির অনেক জায়গা একেবারে ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ইট, বালু ও মাটি ফেলে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করা হয়। এতে যান চলাচল শুরু হলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় বেশি লাগছে। জানা গেছে, মেজর গনি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস, ট্রাক, পিক-আপ, কাভার্ডভ্যান ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়িসহ আঞ্চলিক রুটের থ্রি-হুইলার চলাচল করে। সাম্প্রতিক সময়ে সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে যানবাহনগুলো প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ব্রাহ্মণপাড়া থেকে ২১ কিলোমিটারের এই সড়কটি যাতায়াতে আগে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট লাগলেও এখন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগছে। সরেজমিনে সড়কটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, বুড়িচং উপজেলা সদর থেকে সদর উপজেলার পালপাড়া গোমতী সেতু পর্যন্ত অন্তত ১০ জায়গার পিচ ও সুরকি বিলীন হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণপাড়া থেকে টাটারা পর্যন্ত বড় বড় গর্তের কারণে সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে সড়কটি যান চলাচলের উপযোগিতা হারাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। দেড় দশক ধরে এ সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান বুড়িচং উপজেলা শহরের মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে এ সড়কে সিএনজি চালাই। আমার এত বছরের অভিজ্ঞতায় রাস্তাটির এত খারাপ অবস্থা কখনো দেখিনি। আগে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটে ব্রাহ্মণপাড়া থেকে কুমিল্লা যাতায়াত করতাম, এখন অন্তত দেড় ঘণ্টা লাগে। এ ছাড়া সড়কের শতাধিক জায়গা ভাঙাচোরা হওয়ায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। রাতে থাকে ছিনতাইয়ের ভয়। সব মিলিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ পথে চলাচল করতে হয়।’ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করেন গোপালনগর আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আনিসুর রহমান মজুমদার সোহেল। তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, দ্রæত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার না হলে এ পথে যান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘সাম্প্রতিক সময়ের বন্যায় এই রাস্তাটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে যানবাহনের গতি কমে গেছে। তিনি বলেন, যারা কুমিল্লা শহর থেকে বুড়িচং বা ব্রাহ্মণপাড়ায় অফিস করেন তারা আগের সময়ের তুলনায় অন্তত দেড় ঘণ্টা আগে ঘর থেকে বের হন। সড়কটি দ্রæত সংস্কারের দাবি করেন তিনি। সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ, কুমিল্লার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আদনান ইবনে হাসান বলেন, ‘বন্যার পর এ রাস্তাটি চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমরা কয়েক দিন পরপর ছোটখাটো মেরামত করছি। আশা করি আগামী মাসের মধ্যে এ রাস্তাটির সংস্কারকাজ শুরু হয়ে যাবে। তখন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমে যাবে। ‘ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স ম আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজেও দাপ্তরিক কাজে এ সড়কটি ব্যবহার করতে গিয়ে দুর্ভোগের মুখে পড়ি। সাম্প্রতিক বন্যার কারণে রাস্তাটির অবস্থা একেবারে বেহাল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস ধরে রাস্তাটির দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে কয়েক দফা অনুরোধ করেছি। তখন তারা গত অর্থবছরে অপর্যাপ্ত বরাদ্দের কথা জানিয়েছিলেন। তবে চলতি অর্থবছরে এ সড়কের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।