কুমিল্লায় ১ বছরে ৪ শতাধিক ধর্ষণের অভিযোগ

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আশংকাজনক হারে ধর্ষণের অভিযোগ বেড়েছে কুমিল্লায়। নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেও ধর্ষণকাণ্ডের লাগাম টেনে রাখা যাচ্ছে না এ জেলায়। গত ১ বছরে কুমিল্লায় ৪১৬ জন ধর্ষণের অভিযোগে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে পরীক্ষা করানো হয়েছে। ২০১৬ সালে যেখানে ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ২৬৭ জন সেখানে ২০২২ সালে এর সংখ্যা দাড়িয়েছে ৪১৬ জনে । পাঁচ বছরের ব্যবধানে এর সংখ্যা অর্ধেকের চেয়ে বেশি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ২৬৭, ২০১৭ সালে ৩৩০ জন, ২০১৮ সালে ২৯৭ জন, ২০১৯ সালে ৩৫৬ জন, ২০২০ সালে ৩৬৭ জন ধর্ষণের অভিযোগে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা করেছেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, গত বছর শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের নারীসহ ধর্ষণের অভিযোগে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে পরীক্ষা করেছেন । ২০২২ সালের শুধুমাত্র জানুয়ারী মাসে এর সংখ্যা ছিল ৩৫ জন। ফেব্রুয়ারী মাসে ৩০ জন, মার্চ মাসে ৪২ জন, এপ্রিল মাসে ৩৪ জন, মে মাসে ৩৯ জন, জুন মাসে ৪৭ জন, জুলাই মাসে ৩২ জন, আগষ্ট মাসে ৩৯ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৪২ জন, অক্টোবর মাসে ৩০ জন, নভেম্বর মাসে ২২ জন এবং ডিসেম্বর মাসে ২৪ জন। চলতি বছর ধর্ষনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি জুন মাসে ৪৭ জন এবং সবচেয়ে কম নভেম্বর মাসে ২২ জন।
কুমিল্লায় গত এক বছরে নানা কারণে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে ময়নাতদন্ত করেছে ৭শ ৮২টি। তাদের মধ্যে বিষ পানে আত্মহত্যা করেছে ২শ ১১ জন, ফাসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে ২৮৭ জন। বজ্রপাতে নিহত হয়েছে ২ জন, গুলিতে নিহত হয়েছে ২ জন, বিদ্যুাৎ পৃষ্ঠে নিহত হয়েছে ১৬ জন। সন্দেহ জন মৃতের সংখ্যা ১শ। এছাড়াও কবর থেকে তুলা হয়েছে ২ টি মৃত দেহ।
মহানগর মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও নারী নেত্রী সাইফুন নাহার মিতা শিকদার প্রতিবেদককে জানান, আমাদের সমাজে পুরুষ ও নারী উভয়ের মাঝে সচেতনতার অভাব। এ সমাজটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলার জন্য আমাদের সকলের সদিচ্ছা থাকতে হবে এবং সচেষ্ট হতে হবে। পুরুষদের প্রতি আমাদের আবেদন পুরুষরা যেন আমাদের মা বোন মেয়েদের প্রতি একটু সদয় হয় তারা যেন এসব কাজ থেকে বিরত থাকে। এ জন্য আগামীতে আমরা আরো সচেতন হবো আরো উদ্যোগ গ্রহন করবো। তবে আমি আমাদের জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আকুল আবেদন জানাবো এই বলে তারা যেন বিষয়টি অতি গুরুত্বসহকারে দেখে এবং মানুষকে সচেতন করার ব্যাপারে কাজ করে। কেননা ধর্ষণ যেভাবে মহামারী আকার ধারণ করছে তাতে রেহাই পেতে হলে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের জেলার অভিভাববকরা আছেন (মন্ত্রী, এমপি ) তাদের সচেতনতা এবং শক্ত নেতৃত্ব থাকলে আমরা এর থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি বলে আমার বিশ্বাস।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: মো: মোস্তফা কামাল আজাদ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি নিয়ে সকলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। সচেতনতামূলক সভা সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। অভিভাবকরা ও সন্তানদের প্রতি সচেতন হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ছেলে মেয়ে সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ধর্ষণের বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শারমিন সুলতানা জানান, সামাজিকভাবে অবক্ষয়ের কারণে ধর্ষণ বেড়ে গিয়েছে। করোনাকালীন সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে লেখাপড়ার চাপ না থাকায় যুবকদের নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে সবচেয়ে বেশি। নারী-শিশু আইনের সংশোধনের কারনেও এই সংখ্যাটা বেড়েছে। ধর্ষনের শিকার সকলেই কিন্তু আবার প্রকৃত ধর্ষিত নয়। কিছু কিছু ধর্ষণ আসে যেমন ৭০ -৮০ বছর বয়সী মহিলা যারা প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য বা ব্লাকমেইল করার জন্য ধর্ষণের পরীক্ষা করে।

  • কুমিল্লা